গোয়াইনঘাট প্রবাসী সমাজকল্যাণ পরিষদ নিয়ে ধূম্রজাল, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ

|

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি || ১৬ জুলাই ২০২৫

গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘গোয়াইনঘাট প্রবাসী সমাজকল্যাণ পরিষদ’ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে উঠেছে অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ।

বিশ্বের ৩২টি দেশে ছড়িয়ে থাকা গোয়াইনঘাটের প্রবাসীদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। ওমান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যের প্রবাসীদের সম্মিলিত উদ্যোগে গঠিত এই সংগঠনটি প্রথমদিকে প্রশংসনীয় নানা কার্যক্রমে দৃষ্টি কেড়ে নেয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ক্যান্সার, কিডনি রোগীদের চিকিৎসা, এতিমদের ঘর নির্মাণ, লাশ প্রেরণসহ মানবিক সহায়তায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখে।

কিন্তু, ২০২৩-২৪ সাল থেকে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ রয়েছে, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সংগঠনের ফান্ড থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। নাম উঠেছে সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন এবং আব্দুল লতিফ বাবুলের। সংগঠন নিবন্ধনের খরচ দেখিয়ে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠেছে। যেখানে সরকারি খরচ ছিল সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা।

তাছাড়া, অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন— ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে সহায়তার নামে অর্থ তুলে তা ব্যক্তিগত ব্যবসায় খরচ করা হচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করেন, এসব অর্থ দরিদ্রদের হাতে পৌঁছায় না বরং কিছু গোষ্ঠীর পকেটে চলে যায়।

একাধিক গ্রুপিংয়ের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে সংগঠন। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তনের পরিবর্তে কেউ কেউ ‘লিয়াজো কমিটি’ গঠন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে নিজের আধিপত্য বজায় রাখছেন। এর ফলে প্রবাসীদের আস্থা হারাতে বসেছে সংগঠনটি।

সংগঠনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম গোয়াইনঘাটের গরিব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, প্রবাসীদের সম্মিলিত কল্যাণে কাজ করতে। আজ কিছু স্বার্থান্বেষী লোকের কারণে সেই মহৎ উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।”

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন লন্ডন প্রবাসী আব্দুল মুবিন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ওমান প্রবাসী নাসির উদ্দিন। তবে পরবর্তীতে নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় সংগঠনের ভিতরে অস্থিরতা ও দুর্নীতির অভিযোগ।

প্রবাসী সমাজের অনেকেই আশাবাদী, সংগঠনটির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দ্রুত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে সংগঠনটি আবারও তার আগের সুনাম ফিরে পাবে।

GBC News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *